সমাস মানে হলো মিলন, সংক্ষেপণ, একত্রীকরণ, বহু পদকে একপদে রূপান্তর। এক বা একের অধিক পদের মিলনে কিংবা একসাথে যুক্ত হয়ে নতুন একটি অর্থবোধক শব্দ তৈরী করবে এই প্রক্রিয়া বা কাজটাকেই সমাস বলে।
যেমন-
[১] মৌ বা মধু সংগ্রহ করে যে মাছি = মৌমাছি
[2] ডাক বহন করে যে গাড়ি = ডাকগাড়ি
উপরের দুটি বাক্যে [ মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি ] বাক্যে অনেক গুলো পদ আছে।
যেমন- [মৌ, সংগ্রহ, করে, যে, মাছি ] প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা একেকটি পদ।
পদ বলতে আমরা বুঝি, বাক্যে ব্যবহার হয় এমন সকল শব্দকেই পদ বলে। তাহলে এই পদ গুলো মিলে বা একত্রে [মৌমাছি ] নামক একটি শব্দ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়ার নামই সমাস। আশা করি সমাস ব্যাপার টা বুঝতে পারছো।
সমাস জানতে হলে এর সাথে সম্পর্কিত ৫টি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে আগে
[ ১] সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ
এক বা একের অধিক পদ মিলে বা একত্রে যে একটি পদের সৃষ্টি হয় তাকেই সমস্তপদ বলে।
যেমন : মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি = মৌমাছি
[মৌমাছি] নামক নতুন পদটিই হলো সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বা সমাসনিষ্পন্ন পদ।
[২] সমস্যমান পদ
হলো মৌ বা মধু সংগ্রহ করে যে মাছি = মৌমাছি [ মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি ] বাক্যের প্রত্যেকেই একেকটা সমস্যমান পদ।
মৌ = একটি সমস্যমান পদ
সংগ্রহ = একটি সমস্যমান পদ
করে = একটি সমস্যমান পদ
যে = একটি সমস্যমান পদ
মাছি =একটি সমস্যমান পদ
এই সমস্যমান পদ গুলো মিলেই একটি সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ [মৌমাছি] তৈরী হয়।
[৩] সমাসবাক্য বা ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহ বাক্য
সমস্যমান পদ [ মৌ, সংগ্রহ, করে, যে, মাছি ] গুলো মিলে যে একটি বাক্য বাক্যের অংশের মতো শুনায় তাকে সমাসবাক্য বা ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহ বাক্য বলে।
আবার,
যদি সমস্তপদ [মৌমাছি] কে বিশ্লেষণ বা ব্যাখা করি তাহলে আমরা [মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি ] এই বাক্য বা বাক্যের অংশটা পাই এই বাক্য বা বাক্যের অংশটাকেই সমাসবাক্য বা ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বলে।
[৪]পূর্ব পদ:
সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বা সমাসনিষ্পন্ন পদ গুলো দুটি অংশ থাকে। যেমন- মৌমাছি বা ডাকগাড়ি
[মৌমাছি] পদ বা শব্দটির দুটি অংশ
[মৌ] হলো পূর্বপদ
আর [মাছি] হলো পরপদ বা উত্তরপদ।
[৫ ] পরপদ বা উত্তর পদ:
ডাক বহন করে যে গাড়ি = ডাকগাড়ি
এখানে, [ডাক] হলো পূর্বপদ
আর [গাড়ি]হলো পরপদ বা উত্তর পদ।
আশা করি তোমরা সমাস বুঝতে পারছো। না বুঝে থাকলে মনোযোগ সহাকারে আরো এক দু বার পড়ে নাও। তাহলেই হবে।। নাম গুলো মুখস্থ করে নাও। জীবনে কখনো ভুল হবে না।
আরও পড়ুন>>>> ক্রিয়াপদ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
[ দ্বন্ধ ]
দ্বন্ধ শব্দের অর্থ [ কলহ, বিবাদ, দ্বিধা, সংঘাত, সম, সমান ] সমাসের ক্ষেত্রে দ্বন্ধ মানে সমান। মানে হলো এই সমাসে প্রতিটি পদের অর্থের= Meaning] সমান প্রাধান্য থাকে।
যে সমাসে প্রত্যেকটি” সমস্যমান” পদের অর্থের বা Meaning এর সমান প্রধান্য থাকে তাকেই বা সেই সম্পর্কটাকেই দ্বন্ধ সমাস বলে।
যেমন- মা ও পিতা [সমস্যমান পদ] = মাতা-পিতা [সমস্তপদ]
দা ও কুমড়া [ সমস্যমান পদ ]= দা-কুমড়া [সমস্তপদ]
স্বর্গ ও নরগ [সমস্যমান পদ] = স্বর্গ নরক [সমস্তপদ]
দ্বন্ধ সমাসে [পূর্বপদ বা পরপদ] দেখানোর জন্য ব্যাসবাক্যে বা সমাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে সাধারণত সংযোজক অব্যয় [ ও, এবং, আর ] এই তিনটি অব্যয় পদ ব্যবহার করা হয়। দ্বন্দ সমাসের কিছু উদাহরণ-
১ মিলন অর্থক = মাতা-পিতা, দাদা-দাদি, চা-বিস্কুট, জ্বিন-পরি, চাচা-চাচি, মামা-মামি ইত্যাদি
২ বিরোধ অর্থক = দা-কুমড়া, অহি- নকুল [সাপ-বেজি],স্বর্গ-নরক ইত্যাদি
৩ বিপরীত অর্থক = আকাশ-পাতাল, আয়- ব্যয়, জমা-খরচ,ছেলে- বুড়ো, লাভ-লোকসান ইত্যাদি
৪ অঙ্গবাচক = হাত-পা, চোখ-মুখ, নাক-কান, বুক-পিঠ, মাথা-মণ্ডু ইত্যাদি
৫ সংখ্যাবাচক = সাত-পাঁচ, নয়-ছয়, সাত-সতের, উনিশ-বিশ ইত্যাদি
৬ সম বা সমান অর্থ প্রকাশক বা সমার্থক পদে = হাট-বাজার, ঘর- দুয়ার, কল-কারখানা, মোল্লা-মৌলভী, খাতা-পত্র ইত্যাদি।
৭ প্রায় সমান অর্থ প্রকাশক ও সহচর পদে = কাপড়-চোপড়, পোকা-মাকড়, দয়া-মায়া, ধূতি-চাদর ইত্যাদি
৮ দুটি সর্বনাম বা pronoun যোগে =যা-তা, যে-সে,যথা-তথা, তুমি-আমি,যেখানে-সেখানে ইত্যাদি।
৯ দুটি বিশেষণ বা Adjective যোগে = ভালো-মন্দ, কম-বেশি, আসল-নকল, বাকি-বকেয়া ইত্যাদি
১০দুটি ক্রিয়া যোগে =দেখা-শুনা, যাওয়া-আসা, চলা-ফেরা, দেওয়া-থোওয়া, উঠা-বসা ইত্যাদি।
১১ দুটি ক্রিয়া বিশেষণ বা Adverb যোগে = ধীরে-সুস্থে, আগে-পাছে, আকারে-ইঙ্গিতে
উপরের সকল পদই সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্তপদ বা সমাসনিষ্পন্ন পদ।
[ অলুক দ্বন্ধ ]
অলুক বা অলুপ শব্দের অর্থ হলো যা লুপ পায় না। অলুক দ্বন্ধ সমাসে বিভক্তি লুপ পায় না বা হ্রাস হয় না। বিভক্তি সরাসরি সমস্তপদে যোক্ত হয়।
সঙ্গা : যে দ্বন্ধ সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলুক বা অলুপ দ্বন্ধ সমাস বলে।।
যেমন- দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে- বিদেশে, হাতে-কলমে ইত্যাদি।
[ কর্মধারয় সমাস ]
আমরা জানি সমাসে ২টি পদ থাকে,পূর্বপদ এবং পরপদ বা উত্তরপদ। কর্মধারয় সমাসের ২টি পদের ১টি বিশেষ্য বা Noun অপর পদটি বিশেষণ বা Adjective। ২টি পদই বিশেষ্য বা বিশেষণ এবং উত্তরপদ বা পরপদের অর্থ (Meaning) প্রধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম
ভাজা যে আলু = আলুভাজা
অধম যে নর = নরাধম
কাঁচা যে কলা = কাঁচকলা
উপরের বাক্যে,
নীল + পদ্ম = বিশেষণ + বিশেষ্য।
আলু + ভাজা = বিশেষ্য + বিশেষণ
বিশেষ্য এবং বিশেষণ একে অপরের সাথে মিলে কর্মধারয় সমাস হয়েছে।
বিভিন্নভাবে কর্মধারয় সমাস গঠিত হয় –
১.বিশেষ্য + বিশেষণ = Noun + Adjective
ভাজা যে আলু = আলুভাজা
অধম যে নর = নরাধম
বাটা যে হলুদ = হলুদবাটা
পোড়া যে বেগুন = বেগুনপোড়া
ভাজা যে চাল = চালভাজা
উত্তম যে নর = নরোত্তম
উপরের বাক্যে সমস্তপদ বা সমাসনিষ্পন্ন পদ বা সমাসবদ্ধ পদ গুলো [বিশেষ্য বা Noun] এবং [বিশেষণ বা Adjective] মিলে গঠিত হয়েছে।
ক.পূর্বপদ বিশেষ্য বা Noun গুলো – [আলু, নর, হলুদ, বেগুন, চাল,
খ.পরপদ বা উত্তরপদ বিশেষণ বা Adjective গুলো – [ভাজা, অধম, বাটা, পোড়া, ভাজা
২.বিশেষণ + বিশেষ্য = Adjective + Noun
কাঁচা যে কলা = কাঁচকলা
গুণি যে জন = গুণিজন
সৎ যে লোক = সৎলোক
নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম
ক্ষুধিত যে পাষাণ = ক্ষুধিতপাষাণ
মহৎ যে আত্মা = মহাত্মা
উপরের বাক্যের ব্যাখ্যা পড়ো।
ক.পূর্বপদ বিশেষণ – [কাঁচা, গুণি, সৎ, নীল, ক্ষুধিত,
৩. বিশেষ্য + বিশেষ্য=Noun + Noun
ব্যাখ্যা:-বিশেষ্য এবং বিশেষ্য সমাসের ক্ষেত্রে (ব্যাসবাক্যে বা সমাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যে) [যিনি-তিনি, যেই-সেই, যে-সে, যাহা-তাহা, যা-তা] ইত্যাদি এই সকল (সাপেক্ষবাচক বা সঙ্গতিবাচক বা সমন্ধবাচক সর্বনামপদ বা অব্যয়পদ) উভয় পদের পূর্বে ব্যবহার হয়। উভয় পদ বলতে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্যের (পূর্বপদ এবং পরপদ বা উত্তরপদ)।
যেমন- যিনি মৌলভী তিনিই সাহেব = মৌলভীসাহেব
যিনি ঠাকুর তিনিই দাদা = ঠাকুরদাদা
যিনি দাদা তিনিই ভাই = দাদাভাই
যিনি লাট তিনিই সাহেব = লাটসাহেব
যিনি রাজা তিনি ঋষি = রাজর্ষি
অসংলগ্ন অর্থ বা Meaning এর সম্ভাবনা থাকলে (ব্যাসবাক্যে বা সমাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে) উভয় পদের মাঝে ‘অথচ’ ব্যবহার করা চলে।
যেমন- রাজা অথচ ঋষি = রাজর্ষি
ঠাকুর অথচ দাদা = ঠাকুরদাদা
৪.বিশেষণ + বিশেষণ = Adjective + Adjective
বিশেষণের সাথে বিশেষণের সমাসের ক্ষেত্রে ৩ নিয়মের মতোই। ব্যাসবাক্যে বা সমাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে [যিনি-তিনি, যেই-সেই, যে-সে, যাহা-তাহা, যা-তা] ইত্যাদি সর্বনাম বা অব্যয় উভয় পদে ব্যবহার হয়।
যেমন- যে চালাক সে চতুর = চালাকচতুর
যাহা কাঁচা তাহাই মিঠা = কাঁচামিঠা
যিনি গণ্য তিনিই মান্য = গণ্যমান্য
আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা
কিছু কাঁচা কিছু পাকা = কাঁচাপাকা
যে শান্ত সে শিষ্ট = শান্তশিষ্ট
যাহা মিঠা তাহা কড়া = মিঠাকড়া
কড়া যে মিঠা বা মিষ্টি = [কড়ামিষ্টি বা মিঠাকড়া ] এ ক্ষেত্রে [মিঠা বা মিষ্টি] হচ্ছে বিশেষ্য বা Noun পদ।
অসংলগ্ন অর্থ বা Meaning এর সম্ভাবনা থাকলে ব্যাসবাক্যে বা সমাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে উভয় পদের মাঝে[ ‘অথচ’] ব্যবহার করা চলে।
যেমন-কাঁচা অথচ মিঠা = কাঁচামিঠা
শান্ত অথচ শিষ্ট = শান্তশিষ্ট
উপরের বিষয় গুলো ছাড়াও কর্মধারয় সামাসে আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
[ক] কর্মধারায় সমাসের (ব্যাসবাক্যে বা বিগ্রহবাক্যে বা সমাসবাক্যের) পূর্বপদের [স্ত্রীবাচক বিশেষণ] থাকলে তা (সমস্তপদ বা সমাসনিষ্পন্ন) পদে সেটি [পুরুষবাচক] হয়।
যেমন- সুন্দরী যে লতা=সুন্দরলতা
মহতী যে কীর্তি=মহাকীর্তি
[খ] আবার পূর্বপদে যদি [মহান বা মহৎ] বিশেষণ বাচক পদ থাকে তাহলে সমস্তপদে [মহান বা মহৎ] এর পরিবর্তে বা তার জায়গায় [মহা] শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যেমন-
মহৎ যে জ্ঞান = মহাজ্ঞান
মহৎ যে কাব্য = মহাকাব্য
মহান যে নবী = মহানবী
মহান যে জন = মহাজন
[গ] (ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্যের) পূর্ব পদে৷ যদি [কু] বিশেষণ থাকে এবং পরপদ বা উত্তর পদের প্রথমে যদি স্বরধ্বনি [অ, আ অ্যা, ই, উ, এ, ও] থাকে তাহলে সমস্তপদে [ক]এর স্থলে বা তার জায়গায় [কদ] হয়।যেমন-
কু যে অর্থ = কদর্থ
কু যে আচার = কদাচার
কু যে আকার = কদাকার
কর্মধারয় সমাসের প্রকার বা শ্রেণীবিভাগ
কর্মধারয় মূলত ৪ প্রকার বা কর্মধারয় সমাসটাকে ৪ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।
১.মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
২.উপমান কর্মধারয় সমাস
৩.উপমিত কর্মধারয় সমাস
৪.রূপক কর্মধারয় সমাস
[১] মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
যে কর্মধারয় সমাসের বিশ্লেষণমূলক মধ্যপদ ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য হতে লোপপায় বা হ্রাস পায় বা কমে যায় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।।
যেমন- মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি = মৌমাছি
সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন
পল বা মাংস মিশ্রিত অন্ন = পলান্ন বা পোলাও
হাত চালিত পাখা = হাতপাখা
চিৎ অবস্থায় সাঁতার = চিৎসাঁতার
মানি রাখার ব্যাগ = মানিব্যাগ
হাঁস চিহ্নিত যে মার্কা = হাঁসমার্কা
ঘর আশ্রিত যে জামাই = ঘরজামাই
ঘি মাখা ভাত = ঘিভাত
[২] উপমান কর্মধারয় সমাস
যার সাথে তুলনা করা হয় তাই বা তাকেই উপমান বলে। যাকে তুলনা করা হয় তাই বা তাকেই উপমেয় বলে। উপমান পদের সাথে উপমেয়ের সাধারণ গুণবাচক পদের সাথে যে সমাস হয় তাকেই উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। উপমান কর্মধারয় সমাসের ক্ষেত্রে উপমেয় পদের বা যাকে তুলনা করা হলো তাকে উল্লেখ করা হয়না বা অনুপস্থিত থাকে। যেমন-
বকের ন্যায় ধার্মিক = বকধার্মিক
উপরের বাক্যে [বক] হলো উপমান পদ। কারণ [বক] এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। ধার্মিক হলো গুণবাচক পদ। কিন্তুু বকের ন্যায় ধার্মিক কে? যে বকের ন্যায় ধার্মিক সেই হলো উপমেয়। কিন্তুু শর্তমতে উপমান কর্মধারয় সমাসে উপমেয় পদ থাকে না বা অনুপস্থিত।
মিশির ন্যায় কালো = মিশকালো
‘মিশ’ হলো বিশেষ্য বা Noun যা উপমান পদ। ‘কালো’ হলো বিশেষণ বা Adjective সাধারণ ধর্ম বা গুণবাচক পদ।। সুতরাং, উপমান কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদ বিশেষ্য বা Noun এবং পরপদ বা উত্তরপদ বিশেষণ বা Adjective হয়ে থাকে।।
উদাহরণ- শশকের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত
কুসুমের ন্যায় কোমল = কুসুমকোমল
কাঠের ন্যায় কঠিন = কাঠকঠিন
হস্তির ন্যায় মূর্খ = হস্তীমূর্খ
নিমের ন্যায় তিতা = নিমতিতা
বকের ন্যায় ধার্মিত = বকধার্মিক
গো বা গরুর ন্যায় বেচারা = গোবেচারা
কাজলের ন্যায় কালো = কাজলকালো
শশক শব্দের অর্থ [ খরগোশ ]
ন্যায় মানে হলো = মতো বা তুল্য [ শশকের ন্যায় বা মতো ব্যস্ত = শশব্যস্ত ]
[৩] উপমিত কর্মধারয় সমাস
এই উপমিত কর্মধারয় সমাসে গুণের বা ধর্ম বা Adjective এর উল্লেখ থাকে না। উপমান পদ [মানে হচ্ছে যার সাথে তুলনা করা হয় ] ও উপমেয় পদ [যাকে তুলনা করা হয়। ] মিলে যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।।
উপমিত কর্মধারয় সমাসের উভয় পদ [পূর্বপদ এবং পরপদ বা উত্তরপদ] বিশেষ্য বা Noun হয়।। উদাহরণ-
বাহু লতার ন্যায় বা মতো=বাহুলতা
পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ
চন্দ্রের ন্যায় মুখ = চন্দ্রমুখ
নর সিংহের ন্যায় = নরসিংহ
অধর পল্লবের ন্যায় = অধরপল্লব
নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল
চক্ষু পদ্মের ন্যায় বা পদ্মের ন্যায় চক্ষু = পদ্মচক্ষু
সোনার ন্যায় মুখ = সোনামুখ
উপরের বাক্যে উপমান পদ বিশেষ্য হলো = [লতা, সিংহ, চন্দ্র, সিংহ, পল্লব,
উপমেয় পদ বা যাকে তুলনা করা হচ্ছে তা হলো = [বাহু, পুরুষ, মুখ, নর, অধর,
তাহলে বুঝতে পারলাম গুণের কথা উল্লেখ না করে বিশেষ্য এবং বিশেষ্য পদের সমাসই হলো উপমিত কর্মধারয় সমাস।।
উপমান এবং উপমিত কর্মধারয় সমাস চিনতে বা নির্ণয় করতে সহজ এবং প্রকৃত উপায় হলো সাধারণ ধর্ম বা গুণবাচক পদ বা বিশেষণ বা Adjective।
[ ৪] রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমান এবং উপমেয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হলে বা যার সাথে তুলনা করা হয় তার সাথে যাকে তুলনা করা হবে তার অভেদ কল্পনা করা হয় তাকেই রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এই সামসে উপমেয় পদ বা যাকে তুলনা করা হয় সেটা পূর্বে বসে এবং উপমানপদ বা যার সাথে তুলনা করা হয় তা পরে বসে।
[রূপ অথবা ই] যোগ করে [ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য বা সমাসবাক্য] গঠন করা হয়। যেমন-
ক্ষুধা রূপ অনল = ক্ষুধানল
বা ক্ষুধাই অনল = ক্ষুধানল
এখানে [অনল বা আগুন] হলো উপমানপদ
এবং [ক্ষুধা] হলো উপমেয়পদ
ক্ষুধা হলো অনলের বা আগুনের মতো
উদাহরণ- মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
বা মনই মাঝি = মনমাঝি
দিল রূপ দরিয়া = দিলদরিয়া
বা দিলই দরিয়া = দিলদরিয়া
বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু
ক্ষুধা রূপ অনল = ক্ষুধানল
বিদ্যা রূপ ধন = বিদ্যাধন
শোক রূপ অনল = শোকানল
ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল
অমৃত রূপ বচন = অমৃতবচন
উপরের বাক্যে পূর্বপদ বা উত্তরপদ = [মন, দিল, বিষাদ, ক্ষুধা, বিদ্যা,
পরপদ বা উত্তরপদ =[মাঝি, দরিয়া, সিন্ধু, অনল, ধন,
[ তৎপুরুষ সমাস ]
বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাস ৬ প্রকার
১.দ্বিতীয়া তৎপুরুষ
২.তৃতীয়া তৎপুরুষ
৩.চতুর্থী বিভক্তি
৪.পঞ্চমী বিভক্তি
৫.ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস
৬.সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
৭.অলুক বা অলুপ তৎপুরুষ সমাস
৮.নঞ তৎপুরুষ সমাস
৯. উপপদ তৎপুরুষ সমাস
১০.প্রাদি তৎপুরুষ সমাস
[ বিভক্তি ]
বাংলা ভাষার শব্দগুলো বাক্যে ব্যবহার করার জন্য শব্দের সাথে কিছু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যুক্ত হয় তাকেই বিভক্তি বলে। অথবা বিভক্তি শব্দকে পদে রূপান্তর করে বাক্যে ব্যবহারের জন্য। যেমন-
অ, কে, রে, র, এর, এ, য়, তে
মাসুমকে বাজারে যেতে হবে
মাসুম+ কে বিভক্তি
বাজার + এ বিভক্তি
যেত+ এ বিভক্তি
হব+ এ বিভক্তি।
এ গুলোই বিভক্তি।।
7 thoughts on “সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?”